ফের কাটমানি তোলার অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে : তদন্তে প্রশাসন

14th September 2020 12:19 pm মালদা
ফের কাটমানি তোলার অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে : তদন্তে প্রশাসন


দেবাশীষ পাল ( মালদা ) :  মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের হোসেনপুর বুথের সদস্যার স্বামী তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টকা কাটমানি নিয়েছেন বলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন দুই উপভোক্তা। তাদের অভিযোগ, ৩০ হাজার টাকা কাটমানি নেওয়ার পর তারা দুই কিস্তির টাকা পেয়েছেন। কিন্তু তৃতীয় কিস্তির টাকা না মেলায় তারা ঘর সম্পূর্ণ করতে পারছেন না। তৃতীয় কিস্তির টাকা পেতে আবারও তাদের কাছে কাটমানি চাওয়া হচ্ছে। কাটমানি না দিলে তারা তৃতীয় কিস্তির টাকা পাবেন না বলে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত মাস দুয়েক আগেও ওই বুথের সদস্যা আরাধনা পোদ্দারের স্বামী অলোক পোদ্দারের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ প্রশাসনের কাছে জানিয়েছিলেন এক উপভোক্তা সেহেনা বিবি। তারপর তার বিরুদ্ধে ফের কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন ওই বুথেরই দুই উপভোক্তা আরিফুল ইসলাম ও গুনো শর্মা। অভিযোগকারী আরিফুল ইসলাম বলেছেন,"তিনি সরাসরি অলক পোদ্দারের হাতেই ৩০০০০টাকা দিয়েছিলেন। হুমকি দেওয়া হতো টাকা না দিলে ঘর পাবে না।গরিব ক্ষেতমজুর তিনি।প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন তার টাকাটা যাতে ফেরত পান।"
আরেক অভিযোগকারী গুনো শর্মাও ওই একই অভিযোগ করেছেন।তিনি বলেছেন,"তাদের দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে,হুমকি দিয়েছেন অলক পোদ্দার।তিনি ও তার টাকা ফেরত চান।" অভিযোগকারী উপভোক্তারাও তৃণমূল সমর্থক। গরিব মানুষদের কাছ থেকে কাটমানি নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা-কর্মী। এতে দলের বদনাম হচ্ছে বলেও সরব হয়েছেন তারা।
তৃণমূলেরই একাংশের সূত্রে খবর, এলাকার দাপুটে সিপিএম নেতা অলোক পোদ্দার গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরেই শাসকদলে যোগ দেন। তার স্ত্রী সিপিএম থেকে জয়ী হলেও তিনিও শাসকদলে যোগ দেন। কিন্তু তিনি এলাকার তৃণমূল কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে সিপিএমকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে। কিন্তু এলাকায় তার এমনই দাপট যে, কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না। স্থানীয় পুরনো তৃণমূল কর্মীরাই জানান, এলাকার বহু মানুষের কাছে আবাস যোজনার ঘর পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে কাটমানি নিয়েছেন অলোক পোদ্দার। সাহস করে সেহেনা বিবি অভিযোগ জানানোয় তার স্বামীকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। প্রতিবাদ করায় এলাকার কয়েকজন তৃণমূল কর্মীকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তারপরেও সাহসে ভর করে ফের অভিযোগ জানিয়েছেন দুই উপভোক্তা। এবার তাদেরও মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। কিন্তু ঘর সম্পূর্ণ করতে না পেরে বাধ্য হয়েই তারা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতারা জানান, অলোক পোদ্দার এক পা শাসকদলে আর এক পা রয়েছে বিজেপিতে। আর শাসকদলের নেতাদের একাংশের ছত্রছায়ায় থেকে  যা খুশি তাই করছেন। মুখ্যমন্ত্রী, জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর কাটমানি না নেওয়ার বিষয়ে ও দুর্নীতি বন্ধে বারবার বার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্থ কিছু নেতার জন্য দলের বদনাম হচ্ছে।

তৃণমূলের জয় হিন্দ বাহিনীর কুশিদা অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ চঞ্চল বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন।তিনি বলেছেন," কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ চাইছে দলের ছবি খারাপ করতে।এরা চাইছে একুশের ভোটে তৃণমূল হেরে যাক। কিন্তু ব্লক নেতৃত্বরা সব জেনেও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।কারণ তারাও এই কাটমানির কমিশন পাচ্ছে।"এদিকে বারবার অভিযোগ জানানোর পরেও কেন প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না সেই অভিযোগও তুলেছেন তৃণমূলের একাংশের পাশাপাশি বিরোধীরা। প্রশাসন সক্রিয় না হওয়ায় দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের দাপট বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।এই প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেছেন,"আমি বহুবার বলেছি সরকারি কোন প্রকল্পের জন্য কেউ টাকা চাইলে যাতে না দেওয়া হয়।আর কেউ এরকম করে থাকলে তার নামে যেন  প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়।বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।"এই ঘটনা নিয়ে বিজেপির জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন।তিনি বলেছেন,"গোটা তৃণমূল দলটাই কাটমানি তে পরিণত হয়েছে।উঁচুতলা থেকে নিচু তলা পুরোটাই দুর্নীতিগ্রস্ত।আমরা কাটমানি নিয়ে কিছুদিন আগে মহকুমা শাসকের কাছে একটি ডেপুটেশন দিয়েছিলাম।কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কোনো ফল হচ্ছে না।কারণ কাটমানির ভাগ প্রত্যেকেই পাচ্ছে।"





Others News